২৪০- ২৬০ রান করাই কি বাংলাদেশ দলের যোগ্যতা! এর দায় কি শুধু ক্রিকেটারদের নাকি বোর্ডের?

0

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ৪ টা ম্যাচ শেষ হলো। প্রথম ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে দাপুটে জয়ের পর বড় ৩ দলের সাথে বাজে ভাবেই পরাজিত হয় টাইগাররা। ৪ ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটিং একই পথে হেটেছে। আফগানদের সাথে ১৫৭ রান তাড়া করতে বাংলাদেশের খরচ হয়েছে ৩৪.৪ ওভার। এর মানে পুরো ব্যাট করলে হয়তো ২৫০-২৬০ রানেই শেষ হত বাংলাদেশের ইনিংস। ইংল্যান্ডের সাথে ৩৬৫ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল মাত্র ২২৭।

এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যার্থতার পর সেই সাকিন, মুশফিক ও রিয়াদ এই তিন পান্ডবের কল্যাণে ২৪৫ রান কতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ইন্ডিয়ার সাথে যদিও বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা প্রথম বারের মতো দারুন খেলেন এবং ১৪.৪ ওভারে ৯৩ রানের জুটি করেন। কিন্তু এরপর মিডল অর্ডারের হোঁচট। আবারও হাল ধরতে হয় মুশফিক ও রিয়াদকে। দিন শেষে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৫৬।

পিচ যেমনই হোক না কেন, ২৫০-২৬০ রানের মধ্যেই আটকে যাচ্ছে টাইগারদের ব্যাটিং। বাংলাদেশ দলের সক্ষমতা কি তাহলে এটুকুই? তাহলে কীভাবে আমরা আশা করতে পারি যে দল সেমিফাইনালে খেলবে। আমরা জানি আইসিসি টুর্নামেন্টগুলিতে পিচ সাধারণত ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি হয়। হরহামেশাই ৩০০’র বেশি রান হয়। দারুণ বোলিং আট্যাক হলেও প্রতিপক্ষ ৩০০’র বেশি রান করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সেই আভাস নেই। মিরপুরের লো এবং স্লো উইকেটে খেলতে খেলতে ব্যাটসম্যানদের মনোজোগোতে এখনও ২৫০ রানই ভাল স্কোর হয়ে গেছে। প্রচুর ডট বল খেলার সেই অভাস ব্যাটিং পিচে দেখা যায়। মিরপুরের যে পিচ, শুধু মিরপুর বলছি না, বাংলাদেশের বেশীরভাগ উইকেট যেখানে ঘরোয়া ক্রিকেট হয় সেখানেও এই ধরনের উইকেট। ৩০০ রান নিয়মিত করা, ৩০০ টার্গেট তাড়া করা এসবের সাথে আমাদের ক্রিকেটাররা অভ্যস্ত নয়।

আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে, আমরা প্রায়ই দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলো খেলছি আইরল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ের সাথে। এই দুটি দল বিশ্বকাপে অধিকাংশ সময় যায়নি, তবে এই ম্যাচগুলি আমাদের আত্মবিশ্বাস যোগায় ঠিকই কিন্তু নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং ইন্ডিয়ার মত বড় দলগুলোর সাথে খেলতে গেলেই দলে বাস্তব পরিস্থিতি সামনে আসে। এসব ব্যার্থতার পেছনে ক্রিকেট বোর্ডের সঠিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। ক্রিকেটের উন্নতির জন্য ক্রিকেট বোর্ডের সঠিক দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং তাদের সাবলীল সমর্থন প্রয়োজন। ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের এই সাফল্যের পিছনে তাদের বোর্ডের নতুন পরিকল্পনা এবং সমর্থন ছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের উচিত ছিল দলকে বেশি বেশি ব্যাটিং পিচে খেলানো এবং বড় দলের সাথে সিরিজ আয়োজন করা। শুধুমাত্র দুই একটি সিরিজ জিতার জন্য লো এবং স্লো পিচ তৈরি করে না করলে বিশ্বকাপের মত বড় টুর্নামেন্টে এই সমস্যাটি হত না।

আমাদের বোর্ডের সমস্যা হচ্ছে আমরা সংক্ষিপ্ত মেয়াদে চিন্তা করি। বিশ্বকাপে সাফল্য পেতে আমাদের ক্রিকেটারদের স্কুল ক্রিকেট, বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে উন্নত পিচে খেলতে সমর্থন দেওয়া প্রয়োজন। আগামীতে ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা সঠিক এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং তরুণ ব্যাটারদের স্বাভাবিক পিচে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপযোগী পরিকল্পনা তৈরি করবে বলেই আমি আশাবাদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *